কারাগারের বন্দিদের হাতে তৈরি তিন শতাধিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। এসব পণ্য বিক্রির জন্য কারা অধিদফতরের অধীনে ‘বাংলাদেশ জেল কারা পণ্য’ নামে একটি প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে। বাঁশ, বেত, কাঠ ও পাট দিয়ে তৈরি এস পণ্যে সেজেছে পুরো প্যাভিলিয়ন। এসব পণ্য দেখতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। এর মধ্যে জামদানি ও নকশিকাঁথায় বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা।
প্যাভিলিয়ন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পণ্য বিক্রির ৫০ শতাংশ টাকা বন্দিদের দেওয়া হবে। এসব টাকা তারা নিজের ও পরিবার এবং স্বজনদের জন্য খরচ করতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি মোড়া, প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কুলা, কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকাসহ নানা আইটেম, পাটজাত পণ্য, জামদানি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, পাটের তৈরি ব্যাগ রয়েছে কারা প্যাভিলিয়নে। জামদানি শাড়ি সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চার হাজার টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সিংহাসন চেয়ার চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখছেন ও দরদাম করছেন ক্রেতারা। অনেকে আবার বিভিন্ন পণ্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
ফতুল্লা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছেন রানী আক্তার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, বন্দিদের হাতে তৈরি পণ্য দেখতে খুব সুন্দর। বিশেষ করে শোপিস ও নকশিকাঁথা ও জামদানি সবচেয়ে সুন্দর। তবে নকশিকাঁথা ও জামদানির দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। এ কারণে ৩০০ টাকা দিয়ে পুতির তৈরি একটি শোপিস কিনেছি।’
মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছেন হাসান আলী। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বায়না ধরেছে কাঠের তৈরি শোপিস কিনে দেওয়ার জন্য। দাম একটু বেশি মনে হয়েছে। পছন্দ হলে ও দাম মনমতো হলে কিনবো।’
নকশিকাঁথা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পারছেন কারা পণ্য প্যাভিলয়নের কর্মী সোনিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘মেলায় আসা দর্শনার্থীরা নকশিকাঁথা ও জামদানি শাড়ির খোঁজে স্টলে প্রবেশ করছেন। দুই হাজার ও চার হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে নকশিকাঁথা ও জামদানি শাড়ি বিক্রি করছি আমরা।’
কারা পণ্য প্যাভিলিয়নের দেখভাল করছেন ডেপুটি জেলার আক্তারুজ্জামান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন কারাগারের বন্দিদের হাতে তৈরি তিন শতাধিক পণ্য মেলায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁশ, বেত, পুতি, কাঠ দিয়ে নানা রকম ডিজাইনের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও নকশিকাঁথাসহ নানা পণ্য স্টলে আছে। বাঁশের মোড়া, সিংহাসন চেয়ার, কাঠের তৈরি শোপিসসহ নানা পণ্য ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মূলত বন্দিদের হাতে তৈরি সব রকমের পণ্য দিয়ে বাণিজ্য মেলায় কারা পণ্য প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।’
পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ বন্দিরা পাবেন উল্লেখ করে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পণ্য বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ৫০ শতাংশ বন্দিদের দেওয়া হয়। বন্দিরা এই অর্থ নিজেদের কাজে খরচ করতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের জন্যও পাঠাতে পারেন। এ ছাড়া বিক্রির বাকি ৫০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে যাবে।’
কারা পণ্যের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব পণ্য অনেকে শখ করে কেনেন। তা ছাড়া ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথাসহ ব্যতিক্রম নানা পণ্যের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক অনেক বেশি। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে। এসব কারণে বিগত বছরে বিক্রিতে কারা প্যাভিলিয়ন প্রথমস্থান অর্জন করেছিল।’
৩২টি কারাগারের পণ্য প্যাভিলিয়নে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১ ও ২, মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, নারায়ণগঞ্জ কারাগার, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার, ফরিদপুর জেলা কারাগার, খুলনা জেলা কারাগারসহ মোট ৩২ টি কারাগারের বন্দিদের হাতে তৈরি নানা পণ্য এখানে তোলা হয়েছে।’
বাংলাদেশ কারাগারের ডেপুটি জেলার ও কারা পণ্য প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সৈয়দ মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, ‘৩২৫টির অধিক কারা পণ্য আমরা প্যাভিলিয়নে তুলেছি। আসলে বন্দিরা যে সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারেন, সমাজে সংশোধন ও সংস্কার হয়ে চলতে পারেন সেই ধারণা দিতে এসব পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছি। কারাগারের ভেতরে যে মানুষগুলো রয়েছেন, তারা পণ্য তৈরি করে সংশোধনের মাধ্যমে আলোর পথ খুঁজে পাবেন বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া আমাদের কারা সদর দফতরের পাশে প্রদর্শনী সেন্টার হবে। সেখান থেকে কারা পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ।’
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।