প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম (ভিজিটর : )
ইউক্রেন ও রাশিয়া একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বড় ধরনের পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র কয়েক দিন আগে এই সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি দ্রুত এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবেন। তবে কীভাবে তিনি তা করবেন, তা নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। তার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের চতুর্থ বছরে প্রবেশের আগমুহূর্তে নতুন এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ইউক্রেন ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়’ আক্রমণ চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে এই আক্রমণ রাশিয়ার অভ্যন্তরে চালানো হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর মধ্যে ছয়টি মার্কিন-নির্মিত দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর নভেম্বরে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেন। রাশিয়া এটিকে বড় ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি হিসেবে দেখছে।
রাশিয়া আগেই হুমকি দিয়েছিল যে, এই মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হলে তারা তাদের নতুন ওরেশনিক নামের মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র এখন পর্যন্ত একবারই নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ হামলায় সামরিক এবং তেল স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তারা বলেছে, রাশিয়ার সশস্ত্র আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া হবে।
বুধবার রাতে ইউক্রেনের জ্বালানি খাত লক্ষ্য করে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাতে চালানো এই আক্রমণে ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ৩০টি ধ্বংস করা হয়েছে। আরও ৭০টির বেশি আক্রমণ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়ার আরেকটি ব্যাপক হামলা। শীতের মধ্যভাগ, আর তাদের লক্ষ্য এখনও একই: আমাদের জ্বালানি খাত।
তিনি আরও জানান, এই হামলার লক্ষ্য ছিল গ্যাস অবকাঠামো ও জ্বালানি স্থাপনাগুলো, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা ইউক্রেনেরগো জানায়, আক্রমণের ফলে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়।
শীতের মাসগুলোতে রাশিয়া একাধিকবার ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা চালিয়েছে, যার ফলে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপদেষ্টা নিকোলাই পাত্রুশেভ মঙ্গলবার রুশ পত্রিকা কোমসোমোলস্কায়া প্রাভদাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের কোনও দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে রাজি নয়।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন ২০২৫ সালের মধ্যেই একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্ব হারাতে পারে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি।
এদিকে, ইউক্রেনের পক্ষে লড়াইরত এক অস্ট্রেলীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই খবর নিশ্চিত হলে ‘সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
অস্কার জেনকিনস নামের ওই ব্যক্তি গত মাসে রুশ বাহিনীর হাতে বন্দি হন। পরে তার একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে তাকে সামরিক পোশাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিনি সম্ভবত নিহত হয়েছেন।