প্রকাশ: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯:৫৫ এএম (ভিজিটর : )
আজাহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তি না দিলে সারা বাংলাদেশে সর্বত্র আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে।’
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জামায়াতের যুব বিভাগ আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণেই ফেলানি এবং সীমান্ত হত্যার বিচার হয়নি। সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানির লাশ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক।’
তিনি বলেন, ‘আজ ফেলানির বাড়িতে গিয়েছিলাম তার বাবা-মাকে সম্মান জানাতে। মেয়েটার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকল কিন্তু সেই সময়কার নতজানু আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছ থেকে বিচারটা আদায় করতে পারলো না। কারণ তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর।’
তিনি কারাবন্দি জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘তাকে মুক্তি না দিলে সারা দেশে আন্দোলনের দাবালন জ্বলে উঠবে উঠবে। আপনাদের প্রিয় মানুষ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম পরিচ্ছন্ন চরিত্রের মানুষ, দেশপ্রেমিক নেতা- এখনও বন্দিশালায়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তাকে কারাগারে ঢুকিয়েছিল- আমরা বিস্মিত ফ্যাসিস্ট পালিয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের আজহার ভাই এখনও জেলের ভেতরে আছে। বিচারের নামে আমরা কোনও গড়িমসি দেখতে চাই না- আমাদের স্পষ্ট কথা। আজহার ভাইয়ের ওপর ইনসাফ করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। যদি ফিরিয়ে না দেন তাহলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো। বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া জাফলং থেকে পাথুরিয়া সর্বত্র ব্যাপক দাবানল জ্বলে উঠবে।’
জামায়াত আমির বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক সংগঠন জামায়াতের দিকে হাত বাড়ালো। যখন বিপদ এলো তখন আমাদের রাজনৈতিক বন্ধুদের অনুরোধ করেছিলাম, বিপদের ঢেউ জামায়াত পর্যন্ত এসে থামবে না। এই ঢেউ সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, যদি সম্মিলিতভাবে ঠেকাতে না পারি- আমাদের আহাজারি বোঝাতে ও শোনাতে পারিনি। একের পর এক প্রতিহিংসামূলক রায়ের মাধ্যমে আদালতকে ব্যবহার করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো।’
কাউনিয়া উপজেলা আমির মাওলানা আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালনা সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর মহানগর আমীর উপাধ্যক্ষ এ টি এম আজম খান, জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানীসহ স্থানীয় উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
মানবতাবিরোধী অপরাধ অভিযোগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায় রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। এখন সেই রিভিউ আবেদন শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে যায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে আনিত অভিযোগ ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেয়েছেন আজহার। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর রিভিউ করেন এটিএম আজহার।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
এখানে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরে রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিল ও রিভিউ'র পর তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।