রান্নার পর এবার শিল্পের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের চিন্তা করছে সরকার। দেশে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন চিন্তা সামনে রেখে কাজ করছে সরকার। সম্প্রতি শিল্পে গ্যাসের দাম এক ধাপে অনেকটা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু দাম বাড়ানো হলেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।
জ্বালানি বিভাগের নীতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিট সূত্র বলছে, শিল্পে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করার বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। অংশীজন বা স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সরকার নীতিমালাটি অনুমোদন করলে শিল্পে এলপিজি ব্যবহার শুরুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের শিল্প কারখানার বড় একটি অংশ গ্যাস দিয়ে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাচ্ছে। গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের মূল্য দিচ্ছে ৩০ টাকা। সরকার এটি বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার চিন্তা করছে। দাম বাড়ানো হলেও শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এখন সব মিলেয়ে ৪ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ দৈনিক ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই বাস্তবতায় সরকার চাইলেও গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পারবে না। কারণে দেশীয় খনিগুলোর উপাদন দিনের পর দিন কমছে। নতুন কোনও বড় খনিও পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু হলেও নিকট অতীতে এর সুফল মেলা কঠিন। গত ১০ বছরে কেবল ভোলা ছাড়া দেশের আর কোথাও বড় কোনও গ্যাসের রিজার্ভ পাওয়া যায়নি। ভোলায় গ্যাস পাওয়া গেলেও জাতীয় গ্রিড না থাকায় সেই গ্যাসে খুব বড় উপকার হচ্ছে না। তবে সীমিত পরিসরে ভোলা থেকে সিএনজি করে একটি কোম্পানি দেশের গাজীপুর অঞ্চলের শিল্পে কিছু গ্যাস সরবরাহ করছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিল্প মালিকরা বাড়তি দামে হলেও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ চাচ্ছে। সঙ্গত কারণে সরকার যদি গ্যাস দিতে না পারে তাহলে বিকল্প হিসেবে এলপিজির সংস্থান করা গেলে তা দিয়েও শিল্প কারখানা চলতে পারে।
হাইড্রোকার্বন ইউনিট সূত্র বলছে, এখন যেমন গ্যাস দিয়ে শিল্প মালিকরা জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, ঠিক একইভাবে এলপিজি দিয়ে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। বেসরকারি অনেক কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করে। এসব কোম্পানি সরাসারি শিল্পে এলপিজি সরবরাহ করবে। বর্তমানে সারা দেশে এলপিজি দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে।
হাইড্রোকার্বন ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা শিল্পে এলপিজি ব্যবহারের নীতিমালার খসড়া শেষে অংশীজনের মতামত নিয়ে সরকারের কাছে জমা দিয়েছি। সরকার এটি চূড়ান্ত করবে। আশা করছি খুব দ্রুত নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ব্যবহৃত এলপিজির পরিমাণ ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ শিল্পে ব্যবহার হলেও এতদিন কোনও সরকারি নীতিমালা ছিল না। সরকারি নীতিমালা থাকলে এলপিজি আরও বেশি ব্যবহার করা সম্ভব। এতে করে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর চাপ কমবে।