প্রকাশ: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:৩৭ এএম (ভিজিটর : )
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর আশ্বাসে অবশেষে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বিক্ষোভ ছেড়ে হাসপাতালে ফিরলেন আন্দোলনে আহতরা। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে তারা যমুনার সামনে থেকে সরে যান।
এর আগে রাত ১২টার দিকে পুলিশের বেরিকেট ভেঙে উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে যান আহত বিক্ষোভকারীরা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। যমুনার সামনে দাঁড়িয়েই দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা তাদের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি।
এসময় বিক্ষোভকারীরা তাদের সাতটি লিখিত দাবি সম্বলিত একটি কাগজ হাসনাত আব্দুল্লাহর হাতে তুলে দেন। তাদের দাবিগুলো হলো- জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ও নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাসহ সবাইকে দ্রুত বিচার করতে হবে; এই সরকারে জুলাই আন্দোলনের কিংবা বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের খুঁজে বের করে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে; আহতদের ক্যাটাগরি পরিমার্জন করতে হবে; আওয়ামী লীগের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; আহতদের সর্বোচ্চ উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে; জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে; আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং আন্দোলনে হতাহতদের আর্থিক অনুদান নিশ্চিত করতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে আহতরা সাত দফা তুলে ধরেন বলেন, আমাদের দাবি মানতে হবে এবং লিখিত আকারে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।
এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি সরকারের কেউ না, আমি আপনাদেরই একজন। আপনারা যেসব দাবি জানিয়েছেন, এরমধ্যে কয়েকটি দাবি চলমান প্রক্রিয়া। এগুলো এক-দুই দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। যেমন আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার, আওয়ামী লীগ দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এগুলো আসলে চলমান প্রক্রিয়া। তবে আপনারা অন্য যে দাবিগুলো জানিয়েছেন, যেমন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আর্থিক অনুদানের বিষয়টি এবং আন্দোলনে আহতদের ক্যাটাগরি করে চিকিৎসা ও আর্থিক ব্যবস্থা করা। এগুলো আমি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যাবো। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব কাজ করবো।
মন্ত্রণালয়ে আলোচনার জন্য কারা আহতদের প্রতিনিধি হবেন, তা নিয়েও দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, যাদের এসব কাজে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়, এক পর্যায়ে তারাও ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নিয়ে দেনদরবার করেন। আমি এগুলো অতীতে দেখেছি। তাই আপনাদের মধ্য থেকে যারা দালালি করবে না, যারা আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করবে; এমন তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে আমি মন্ত্রণালয়ে যাবো। আপনাদের হয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে যেসব দাবি এই মুহূর্তে মানা সম্ভব; সেই দাবিগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পূরণ করার ব্যবস্থা করবো। তবে আপনারা ধৈর্য ধরুন, আমাদের এবং সরকারকে সময় দিন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সম্মান করি। আপনারা আমাদের সর্বোচ্চ মর্যদাশীল ব্যক্তি। আপনাদের সম্মান আমাদের কাছে আজীবন থাকবে।’
পরে প্রতিনিধি বিষয়ে আবার আহতরা আলাপ শুরু করলে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা নিজেরা আলোচনা করে আপনাদের মধ্য থেকে তিন-চার জনের একটি প্রতিনিধি দল তৈরি করুন। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যাবো। আমি আপনাদের দায়িত্ব নিয়েছি। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেন, হাসপাতালে ফিরে যাবেন নাকি এখানে থাকবেন?’
এসময় আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আপনারা বিশ্বাস করেন, এই সরকার যদি আপনাদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা না দেয়। তাহলে অন্য আর কোনও সরকার আপনাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো দেখবে না। ফলে আপনারা এই সরকারের প্রতি বিশ্বাস রাখুন, এই সরকার আপনাদের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করবে। আপনাদের সব দাবি-দাওয়া মেনে নেবে এবং আপনারা আগামীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন, সে বিষয়টি এই সরকার করে দিয়ে যাবে।
এরপর রাত পৌনে ২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ছেড়ে হাসপাতালে দিকে ফিরে যান আহতরা।