প্রকাশ: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৯ এএম (ভিজিটর : )
২০২৩ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় ২৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়, আহত হন শতাধিক। বিস্ফোরণে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি ভবন পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেইজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলাও বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনার দুদিন পর ৯ মার্চ অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর পলাশ সাহা অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনার দুই বছর পার হলেও এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও তিনি জানিয়েছেন, তদন্তকাজ প্রায় শেষ দিকে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ‘অসহযোগিতায়’ তদন্তকাজ কিছুটা দেরি হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেলে শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে।
জানা গেছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিলে দুই জন এবং মে মাস থেকে একজন জামিনে আছেন। আসামিরা হলেন আব্দুল মোতালেব মিন্টু, মো. মতিউর রহমান ও মো. ওয়াহিদুর রহমান। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ধার্য তারিখ ছিল। কিন্তু এদিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় আদালত ধার্য তারিখ পিছিয়ে ৮ এপ্রিল করেন।
মামলার অভিযোগে তৎকালীন বংশাল থানার উপপরিদর্শক পলাশ সাহা উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বংশাল থানাধীন সিদ্দিক বাজারস্থ কুইনস স্যানেটারি মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটে।
প্রাথমিক তদন্তের তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যথাযথ নিয়ম (বিল্ডিং কোড) মেনে তৈরি করা হয়নি। ভবনটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেইজমেন্ট তৈরির অনুমোদনও ছিল না। তাছাড়া অবৈধভাবে নির্মাণকৃত বেইজমেন্টকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কোন অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও তাকে কনস্ট্রাকশন সামগ্রী মজুত ও বিক্রয় করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। একসময় বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহকৃত গ্যাস লাইনে পরিচালিত ‘কুইন্স ক্যাফের’ রান্নাঘরটিকেই বিভিন্নভাবে রি-কনস্ট্রাকশন, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন করা হয়েছিল। সেখানে সরবরাহকৃত গ্যাসের লিকেজ-জনিত সমস্যা, পয়োবর্জ্যে সৃষ্ট গ্যাস নিষ্কাশন ও সুব্যবস্থাপনার কোনও সুযোগ না রেখেই ভবনের মালিক এবং ব্যবহারকারীরা অর্থের লোভে, অবৈধভাবে ভবনের বেইজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোরটি ব্যবহার করে আসছিলেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্যাস, বিদ্যুৎ, স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা, নির্মাণ এবং ব্যবসার লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর লোভ, উদাসীনতা ও অবহেলার সুযোগ নিয়ে ভবনের মালিক এবং ব্যবহারকারীদের এই অপরাধজনক কাজের জন্য এত জীবনহানি এবং মালামালের অনিষ্ট বা ধ্বংস সাধিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়, যা ৩০৪-ক/৪২৭ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারার অপরাধ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক এস এম রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্যের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। গ্যাসের লাইন বিস্ফোরণে ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা মামলা তদন্তের শেষ পর্যায়ে আছি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটা ফাইল পেলে আমরা তদন্তকাজ শেষ করতে পারবো।’
ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেছে জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে ভবনের মালিক ও শোরুমের মালিকের অবহেলার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। এছাড়া ভবনের গ্যাস সংযোগের রাইজার থেকে ভবন পর্যন্ত বাণিজ্যিক সংযোগের ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি ব্যাসের মোটা পাইপটি বিচ্ছিন্ন না করেই উক্ত ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের সঙ্গে আবাসিক সংযোগের সঙ্গে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ সংযুক্ত করা হয়েছে। যা আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদানের নিয়মবহির্ভূত এবং অনিরাপদ।’
তিতাস গ্যাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক তদারকি অভাব এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি কারণেই ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সংযোগ থেকে গ্যাস লিকেজের মাধ্যমে ভবনের আন্ডার গ্রাউন্ডে গ্যাস চেম্বার সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে বলেও তদন্তকালে জানতে পেরেছেন পরিদর্শক রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আবাসিক গ্যাস সরবরাহের প্রথম সংযোগ থেকে বর্ধিতকরণ পর্যন্ত সব তথ্য এবং বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ থেকে আবাসিক সংযোগে রূপান্তর কত সালে এবং কোনও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়েছে, এই সংক্রান্ত সব তথ্য জানা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, এ তথ্য প্রাপ্তির জন্য আদালতের নির্দেশসহ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা আমাদের এখনও তথ্য দিতে পারেননি। তারা বলছেন, সেই ফাইলটা ওনারা হারিয়ে ফেলছেন। অথচ এর আগে ও পরের সব ডকুমেন্ট ওনাদের কাছে আছে।’