সারা দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তির দাবিতে মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হন রোকেয়া হলের সামনে। সেখানে দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হল থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত ধর্ষণের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবিতে শনিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় মধ্যরাতে পুনরায় বিক্ষোভে নেমেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের শিশুর ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তারা মিছিল করেন।
বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সবাইকে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী প্রশাসনিক কাঠামো ভাঙতে না পেরে আমাদের রাষ্ট্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বয়স, পেশা, ধর্ম নির্বিশেষে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। তাদের হত্যা করা হচ্ছে। নারীরা নিজের ঘরে নিরাপদ না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ না, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নারীর প্রতি সহিংসতাকারীদের শনাক্ত করতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়। আটক করলেও জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড লিখিত থাকলেও তা কার্যকর করা হয় না। আমরা মনে করছি, কাঠামোগতভাবে এই রাষ্ট্র ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম না। আমরা মনে করি, আইনগত দুর্বলতা বাংলাদেশে ধর্ষক তৈরি করে। আমরা এখানে দাড়িয়েছি ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে, নারীবিদ্বেষী আগ্রাসী মব, বিচারহীনতার বিরুদ্ধে।
বিক্ষোভ সমাবেশে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়াহ্ বলেন, আজ একটা দিনের ভেতর মিনিমাম ৫টা ধর্ষণের নিউজ পেয়েছি, আরও থাকতে পারে। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এই জাতি কোনোদিন দেখেনি। এই দেশের ধর্ষকদের মাইন্ডসেট হয়ে গেছে, তারা জানে এর কোনও বিচার কোনোকালেই হয় না। তাদের পক্ষে আইনজীবী মামলায় লড়ে, তারা জামিন পায়। আমরা আর এরকম কোনও ঘটনা দেখতে চাই না। আমরা চাই সব ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যা দেখে আর কোনও পশু সাহস পাবে না এই কাজ করার।
বিক্ষোভ শেষ করে রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য যুগ্ম সদস্যসচিব সোহেল রানা সাব্বির। আজ রবিবার (৯ মার্চ) আবারও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।