প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ১১:২৯ পিএম (ভিজিটর : )
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে না পারলে দেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) আয়োজিত ইফতার পার্টিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যদি আমরা পত্রিকা খুলি, টেলিভিশনের পর্দায় কী দেখি? আমরা দেখি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কী পরিমাণ দুঃখ-কষ্টে আছে এদেশের অধিকাংশ মানুষ। আমরা কেন রাজনৈতিক দলগুলো ডিভেট করছি না যে, জনগণের রায় আমার পক্ষে আসলে আমি কীভাবে এই ব্যবস্থাটিকে হ্যান্ডেল করবো, কীভাবে ডিল করবো… আমি কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনয়ীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখবো। এটিকে যদি (নিয়ন্ত্রণে) রাখতে হয়, তাহলে কীভাবে আমরা বাজার ব্যবস্থা সাজাবো, এটিকে ঠিক করতে হলে কীভাবে আমরা উৎপাদন বাড়াবো।”
‘‘আমি মনে করি, বিএনপি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করে— এসব বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের জাতির সামনে অ্যাড্রেস করা উচিত। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, শুধু সাংবিধানিক ব্যবস্থা, শুধু ভোটের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা যেমন- আলোচনা করা উচিত, তার চেয়ে বেশি আলোচনা হওয়া উচিত কীভাবে মানুষের সমস্যা সমাধান কোন দল কীভাবে করবে।”
তারেক রহমান বলেন, ‘‘আসুন, জনগণের সমস্যাগুলোর বিষয়ে আমরা চিন্তা করি, কথা বলি। এ ব্যাপারেও আমাদের কী কী সংস্কার আছে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি।”
‘‘আমরা বাস্তবধর্মী সমালোচনা একে-অপরের অবশ্যই করবো। কিন্তু সমালোচনা করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি যাতে এসে, না দাঁড়াই, যেখানে আমাদের জনগণের, দেশের এই ইস্যুগুলোকে অ্যাড্রেস করতে ভুলে যাবো। আমাদের কাছে অন্যকিছু মুখ্য হয়ে যাবে, এগুলো গৌণ হয়ে যাবে। এটি যদি হয়, তাহলে এদেশের সম্ভাবনা সব শেষ যাবে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবশ্যই এটি কারোরই চাওয়া নয়।’’
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি উপাদন কীভাবে বৃদ্ধি করবো? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে উপাদন বাড়িয়েছিলেন। যে জমিতে এক ফসল হতো, সেখানে দুই-তিনটি ফসল হয়েছে, সঠিক সময়ে পানি সরবারহ করার মাধ্যমে। খাল খননের মাধ্যমে বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল।”
গুলশান শুটিং ক্লাবে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের সম্মানে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে এনডিএম।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘২০ কোটি জনসংখ্যার বহুল এই দেশের মানুষের একটি প্রাইমারি প্রয়োজন হচ্ছে মিনিমাম চিকিৎসা ব্যবস্থা। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে আমাদের দেশের মানুষের ন্যূনতম চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো— সে বিষয়গুলো কেন তুলে ধরছি না। সেটি কী সংস্কার নয়? আমি যে বাজার ব্যবস্থা ও উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলেছি সেটি কি সংস্কার নয়?”
‘‘শুধু একজন ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না এটিই কি সংস্কার? শুধুমাত্র নির্বাচনের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করতে হবে… অবশ্যই করতে হবে। তবেই কি শুধু সংস্কার? জনগণের সমস্যাগুলো সমাধান করার বিষয়গুলোকে নিয়ে সংস্কার হতে পারে না! আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি, এগুলো সংস্কারের প্রয়োজন। আমাদের ডাইরেকশন থাকতে হবে, আমাদের প্ল্যান থাকতে হবে— যা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমি জনগণের রায় যদি পাই, তাহলে জনগণের ন্যূনতম চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এই সংস্কার করতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘সংস্কার আরও হতে পারে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা যদি সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে কি করে আমাদের পক্ষে সম্ভব এদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, কী করে সম্ভব একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তোলা।”
‘‘প্রত্যেকটি দলের কী ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে, তা জনগণকে জানানো উচিত। আমরা বলি, উপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। ফাইন, তো উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা হলে সেটা কি আরেকটু ডিটেইল বলা উচিত।”
পরিবেশদুষণ রোধে সংস্কার প্রস্তাব জরুরি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘‘পরিবেশদূষণ অত্যন্ত তীব্র মাত্রায় হচ্ছে… সামগ্রিকভাবে সমগ্র বাংলাদেশে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সামনে পরিবেশের ব্যাপারে সংস্কার উপস্থাপন করতে পারি না… কীভাবে আমরা আমাদের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে পারি।”
‘‘এই যে পরিবেশদুষণ কীভাবে কমাতে পারি? আমি মনে করি, পরিবেশ বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এই দুষণের মধ্যে শব্দ দূষণ বলেন, ধোঁয়া দুষণ বলেন— এসব দূষণের কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ, শিশু অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শারীরিকভাবে। এই দূষণ থেকে রাজধানীসহ গোটা দেশকে কীভাবে রক্ষা করতে পারি, এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা জাতির সামনে সব রাজনৈতিক দলের উপস্থাপন করা উচিত।”
শিল্পায়নের পরিবেশ সৃষ্টি, মানুষের খাবার পানি, মানুষের ব্যবহার্য পানি, পরিবেশ-জ্বালানি প্রভৃতি ইস্যুতে করণীয় সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অ্যাড্রেস করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির মাহাদী আমিন, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সারসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও ইফতার-পূর্ব এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।