প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ৪:৩২ পিএম (ভিজিটর : )
ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল অনুদান স্থগিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি হোয়াইট হাউজের এক তালিকা ভিত্তিক দাবিকে প্রত্যাখ্যান করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার হোয়াইট হাউজের দাবি প্রত্যাখ্যান করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজ বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রদায়কে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে চাইছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউজ গত সপ্তাহে হার্ভার্ডকে একটি দাবি সংবলিত তালিকা পাঠায়। তালিকাটি ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী মনোভাব মোকাবেলায় তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো, নিয়োগ নীতি এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও ছিল।
হার্ভার্ড সোমবার সেই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করে জানায়, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করে নীতিতে পরিবর্তন আনতে অস্বীকৃতি জানানো প্রথম বড় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েল ও গাজার যুদ্ধকে ঘিরে সৃষ্ট বিক্ষোভের সময় ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সোমবার এক চিঠিতে বলেন, হোয়াইট হাউজ শুক্রবার একটি তালিকা পাঠিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি এই দাবি মেনে না নিলে সরকারের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছি যে, আমরা তাদের প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নেব না। বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বা সংবিধানিক অধিকার ত্যাগ করবে না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি-বিরোধিতা মোকাবেলায় তার দায়িত্ব হালকাভাবে নিচ্ছে না। তবে সরকারের হস্তক্ষেপ মাত্রাতিরিক্ত।
চিঠিটি পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শিক্ষা দপ্তর জানায়, হার্ভার্ডের জন্য নির্ধারিত ২.২ বিলিয়ন ডলারের অনুদান ও ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি অর্থ সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের পাঠানো দাবি তালিকা বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার পরিবেশে যেভাবে বিঘ্ন ঘটেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি সহ্য করা হবে না। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি করদাতাদের অর্থ পেতে চায়, তবে তাদের বাস্তবিক পরিবর্তনে অঙ্গীকার করতে হবে। এছাড়াও গত দুই বছরে ক্যাম্পাসে যে বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানে কোনো 'উল্লেখযোগ্য লঙ্ঘন' হয়ে থাকলে তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদি-বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা এবং ডাইভার্সিটি কার্যক্রম বাতিলের জন্য চাপ দিয়ে আসছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হার্ভার্ড, পেন এবং এমআইটির প্রেসিডেন্টদের কংগ্রেসে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়।
২০২৫ সালের মার্চে প্রশাসন জানায়, হার্ভার্ডের ২৫৬ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি ও অনুদান পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে। আরও ৮.৭ বিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদি অনুদানও পর্যালোচনাধীন।
হার্ভার্ডের কয়েকজন অধ্যাপক এই প্রেক্ষিতে মামলা করেছেন, অভিযোগ করে যে সরকার অবৈধভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে।
এর আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড বাতিল করেছিল হোয়াইট হাউজ। এরপর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু দাবি মেনে নেয়, যা নিয়ে কিছু ছাত্র ও শিক্ষক মহলে সমালোচনা হয়।
সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদ সংগঠকের আইনজীবী জানান, তার মক্কেল মোহসেন মাহদাভি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন। এছাড়া কলাম্বিয়ার মাহমুদ খালিল ও টাফটস ইউনিভার্সিটির রুমাইসা ওজতুর্কসহ আরও কয়েকজন প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থী সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন।