প্রকাশ: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:৪৪ পিএম (ভিজিটর : )
টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত দিবস আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। জয় বাংলা স্লোগানে মুখোরিত হয় গোটা জেলা। মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ।
দেশ শত্রু মুক্ত করতে টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ গণমুক্তি পরিষদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৭ মার্চ বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় টাঙ্গাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঐদিন রাতেই সার্কিট হাউজ আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। অতর্কিত এ আক্রমণে দুই পাকিস্তানী সেনা নিহত হয় ও ১৫০ জন আত্মসমর্পন করেন। প্রথম আক্রমণে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মে। এরপর থেকেই গ্রামে গ্রামে যুবকরা সংগঠিত হতে থাকে। পাক বাহিনী ৩ এপ্রিল টাঙ্গাইল প্রবেশকালে মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে মুক্তি বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে আক্রমণ করে।
সেদিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৩ জন পাকসেনা নিহত হন। এরপর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালায় ঐ গ্রামে। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১০৭ জন মুক্তিসেনাকে হত্যা করা হয়। পাকবাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে আসেন। তারা নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংগঠিত হতে থাকেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে একের পর এক যুদ্ধ।
চারদিক থেকে আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ১০ ডিসেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের উত্তরে পৌলিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রায় ২ হাজার সেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়ে। তারা ছুটতে থাকে ঢাকার দিকে। সেই রাতেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইল থানা দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
বীর মুক্তিযুদ্ধা আলমগীর হোসেন বলেন, ১১ ডিসেম্বর ভোর থেকেই শহরে প্রবেশ করতে থাকি এবং সারা শহর নিজেদের দখলে নিই। এভাবেই টাঙ্গাইল শহর সম্পূর্ণ হানাদারমুক্ত য়। মুক্তির স্বাদ পেয়ে উল্লাস করতে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয় টাঙ্গাইল শহর।
বজ্র কোম্পানি কাদেরিয়া বাহিনী ৭১ ’ সহ-অধিনায়ক সোলায়মান মিয়া বলেন, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী গঠিত হলে টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধারা যুদ্ধে আরো সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমরা ঘাটাইল থেকে কালিহাতীর পৌলী এলাকার পৌলী ব্রিজে আসলে তখন পাকিস্তানীরা আমাদের ওপর হামলা। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও হামলা করি।
বীর মুক্তিযুদ্ধা শুকুর মাহমুদ বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর দোসর স্থানীয় রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধ চালাকালে অসংখ্য মুক্তিকামী নারী-পুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যেত। সেখানে তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী হয়ে আছে টাঙ্গাইলের বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো।
এদিকে, টাঙ্গাইল নাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি করেছে টাঙ্গাইল জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় শহরের শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যান থেকে বিজয় র্যালিটি শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সভাপতি খালেক মন্ডলের নেতৃত্বে বিজয় র্যালি ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন, জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহিন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, সাবেক সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু, জাতীয়তাবাদ মুক্তিযোদ্ধা দল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান রাশেদ, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দুর্জয় হোড় শুভ প্রমুখ।